আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কীভাবে চোখের যত্ন নেন তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি বলবেন মুখে সাধারণত যে ক্রীম ব্যবহার করি সেটাই চোখে মেখে নেই। আলাদা করে কি চোখের জন্য কিছু ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে? আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার এই সুন্দর দুটি চোখেও সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। আপনার বয়স ত্রিশের কোঠা পার করলেই তার লক্ষণ সবার আগে চোখের মাধ্যমেই পরিলক্ষিত হয় । তাই আকর্ষনীয় ও দীপ্তিময় থাকার জন্য চোখের ত্বকের বিশেষ যত্ন দরকার । আর বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্যই দরকার আই ক্রিম (eye cream)। আই ক্রিম ব্যবহারে আপনার চোখের রিঙ্কেল (wrinkle),ডার্ক সার্কেল (dark circle),ফাইন লাইন (fine line), পাফিনেস (puffiness), ইত্যাদি অচিরেই দূর করা যায়। তার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক আই ক্রিম কি এবং কখন ব্যবহার করতে হবে। আশা করছি আজকের এই ব্লগটি পড়লে চোখের যত্নে আপনার করণীয় কি সেটা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাবেন।
আই ক্রিম কি?
আমাদের অনেকেরই ধারনা, ‘স্কিন টাইপ অনুযায়ী আমরাতো ফেইসে ময়েশ্চারাইজার লাগাই, তাহলে আলাদা করে কেন আই ক্রিম ব্যবহার করবো ?’ বয়স বাড়ার লক্ষণটা সবার আগে চোখের আশেপাশের এরিয়াতেই বেশি প্রকাশ পাই। আর পরিপূর্ণ যত্নের অভাবে দেখা দেয় রিংকেল,ফাইন লাইন, পাফিনেস এবং ডার্ক সার্কেল। মুখে যে ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম আমরা ব্যবহার করি সেটি আই এরিয়ার প্রবলেম আইডেন্টিফাই করতে পারেনা। আই ক্রিম এক ধরনের ময়েশ্চারাইজার,যা শুধুমাত্র বানানো হয় আই এরিয়ার যত্নের জন্যই। চোখের চারপাশের এরিয়াকে বলা হয় Periorbital যা ফেইসের অন্যান্য অংশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সেনসিটিভ। তাই এর দরকার বিশেষ যত্ন এবং এই যত্ন নেওয়ার জন্যই প্রয়োজন আই ক্রিম। এটি চোখের চারপাশকে নারিশড করার পাশাপািশ চোখের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে।এক কথায় আমরা বলতে পারি আই ক্রিম মূলত চোখের চারপাশের ত্বকের কমনীয়তার বিশেষ যত্নের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। তাই এটি তুলনামূলক ময়েশ্চারাইজার (moisturizer)-এর চেয়ে গাঢ় হয়ে থাকে। এছাড়া চোখের ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য এতে তেলের পরিমাণও একটু বেশিই থাকে।
আই ক্রিমে যে উপাদানগুলো থাকা জরুরি
চোখের যত্নে আই ক্রিমের বিকল্প নেই। তবে আই ক্রিমে থাকা উপাদানগুলো কি কাজ করে সেটা জানা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক আই ক্রিমে থাকা উপাদানগুলো কি কাজ করেঃ১) সিরামাইডঃআই ক্রিমে থাকা সিরামাইড চোখের স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করে।২) নিয়াসিনামাইডঃআই ক্রিমে থাকা নিয়াসিনামাইড স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়ায় এবং হাইড্রেটিং ইফেক্ট দেয়। এছাড়া স্কিনের এক্সেস সিবাম রিডিউস করতে নিয়াসিনামাইড গুরুত্বপূর্ণ ভূমকিা রাখে।৩) হায়ালুরোনিক অ্যাসিডঃআই ক্রিমে থাকা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখার পাশাপাশি স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়।৪) আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডঃআই ক্রিমে থাকা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড স্কিনের হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে স্কিনকে ইভেন টোন করতে হেল্প করে । ল্যাকটিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ম্যালিক ও ম্যানডেলিক অ্যাসিড হচ্ছে AHA এর পপুলার কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট।৫) ভিটামিন C,E ও Kঃ আই ক্রিমে থাকাভিটামিন C স্কিনকে সান ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি এর ব্রাইটেনিং প্রোপার্টিজের সাহায্যে স্কিনকে ব্রাইট করে। এতে থাকা ভিটামিন E আপনার চোখের স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং সুদিং ফিল দেয়। ভিটামিন K ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন ইমপ্রুভ করে এবং ডার্ক সার্কেল কমাতে হেল্প করে ।৬) ক্যাফেইনঃ আই ক্রিমে থাকাক্যাফেইনআন্ডার আই সার্কেল ও পাফিনেস কমায় ।৭) রেটিনলঃ আই ক্রিমে থাকা রেটিনল রিংকেলস রিডিউস করতে করে। তবে রেটিনল যুক্ত আই ক্রিম রাতে ইউজ করায় ভালো।৮) SPF: SPF লেখা যুক্ত আই ক্রিম সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিবে এবং চোখের চারপাশে রিংকেলস পড়া রোধ করবে।৯) হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও শিয়া বাটারঃআই ক্রিমে থাকা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এবং শিয়া বাটার চোখের চারপাশের ত্বককে হাইড্রেট করে এবং প্রয়োজনীয় ময়েশ্চারাইজার সরবরাহ করে।১০) পেপটাইডঃআই ক্রিমে থাকা পেপটাইডের কাজ হল কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে স্কিন আরও প্লাম্পি ও ইয়ুথফুল করে তোলা।
কখন থেকে আই ক্রিম ব্যবহার করা উচিত

আমাদের অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন জাগে যে কখন থেকে আই ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার উচিত আই ক্রিম ব্যবহার করা। মূলত ২০ বছর বয়সের পর থেকেই আমাদের উচিত আই ক্রিম ব্যবহার করা। কারণ ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর”। তাই বয়সের ছাপ, ডার্ক সার্কেল, রিংকেল পড়ার আগেই আমাদের উচিত ভালো মানের একটি আই ক্রিম ব্যবহার কার। চোখের ত্বকের যত্নে টাকা ইনভেস্ট করা মানে ক্ষতি নয় বরং ত্বকের যত্নে এক ধাপ এগিয়ে থাকা।
কোন সময়ে ব্যবহার করবেন
সকাল এবং রাত দুই বেলাই আই ক্রিম ইউজ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আই ক্রিমে থাকা উপাদানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।সকালেঃ সকালে বাইরে বের হওয়ার আগে লাইট ওয়েট ফর্মুলার আই ক্রিম যেটাতে SPF আছে সেটা ব্যবহার করা উচিত। এতে মেকআপ ইউজ করলেও আপনি কমফোর্ট ফিল করবেন। রাতেঃ রাতের আই ক্রিম এমন হওয়া উচিত যেটাতে হাইড্রেটিং ইনগ্রেডিয়েন্টস আছে। কারণ ক্রিমে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্টস গুলি রাতে স্কিনে ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়। আর খেয়াল রাখতে হবে যেন রাতের আই ক্রিমে কোন SPF না থাকে।সকালে ও রাতেঃ মোট কথা আপনি যদি বেটার বেনিফিটস চান তাহলে দুই বেলা আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই আই ক্রিমের ফর্মুলা গুলো ডিফারেন্ট হতে হবে।
কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
ত্বক পরিচর্যার সকল প্রডাক্টের মধ্যে সবচেয়ে কম আলোচিত প্রডাক্টটি হল আই ক্রিম। তবে আপনি কি জানেন এই প্রডাক্টটি শুধু যে চোখের চারপাশের ত্বক আর্দ্র আর কোমল রাখে না বরং ডার্ক সার্কেল বা চোখের কোলের ফোলাভাবও কমাতে সাহায্য করে। তাই আমরা বলতে পারি যে আই ক্রিমের বদলে অন্য যে কোন ময়েশ্চারাইজার মাখলে আপনি প্রত্যাশিত ফল পাবেন না। মনে রাখবেন আপনার চোখের চারপাশের ত্বক খুব কোমল, তাই দরকার বিশেষ যত্ন যা শুধুমাত্র আই ক্রিমই দিতে পারে। আই ক্রিমের সম্পূর্ণ উপকারিতাটুকু পেতে হলে তা সঠিকভাবে লাগানো দরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সঠিক উপায়ে আই ক্রিম লাগাতে হয়ঃধাপ 01:প্রথমে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এর পর ব্র্যান্ডের কোন মাইল্ড মেকআপ রিমুভারে তুলো ভিজিয়ে নিয়ে চোখের ওপরের পাতায় আধ ঘণ্টা রাখুন। এর পর আলতো হাতে মুছে নিলে দেখবেন সমস্ত মেকআপ এবং তেলময়লা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এবার আপনার পছন্দের আই ক্রিমটি লাগান।ধাপ 02:আপনার পছন্দের আই ক্রিমটি নিয়ে চোখের নিচের অংশে ফোঁটা ফোঁটা করে লাগিয়ে দিন। আই ক্রিম খুব শক্তিশালী উপাদান দিয়ে তৈরি তাই পরিমাণের চেয়ে বেশি আই ক্রিম নেওয়ার দরকার নেই। অল্পতেই কাজ হয় অনেক বেশি।ধাপ 03:এবার হাতের আঙ্গুল (অনামিকা) দিয়ে হালকাভাবে মাসাজ করে আই ক্রিমটা ত্বকের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। তবে খুব আলতো চাপ দিয়ে ধীর গতিতে মাসাজ করবেন যেন চোখের চারপাশের অসম্ভব কোমল ত্বকের কোনও ক্ষতি না হয়।মুখে অন্য স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করার অঅগে অবশ্যই আই ক্রিমটি সম্পূর্ণভাবে ত্বকে শুষে যেতে দিন।
আই ক্রিম কেন ব্যবহার করবেন
চোখের চারপাশের ত্বকের লেয়ার শরিরের অন্নান্য অংশের তুলনায় অনেক বশি সেনসিটিভ হয়। আর এ কারণেই সাধারণ ময়েশ্চারাইজার দিয়ে চোখের এরিয়ার পুরোপুরি যত্ন নেয়া সম্ভব হয় না। আই ক্রিমের উপাদানগুলো অন্যান্য ময়েশ্চারাইজারের তুলনায় অনেক বেশি কোমল যা চোখের চারপাশের নরম ত্বককে কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা প্রদান করে। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের চোখের ওপর অনবরত চাপ পড়তেই থাকে। সারাদিন আমরা যখন কথা বলি, হাসি বা ফেইসে কোনো ধরনের এক্সপ্রেশন দেই, তখনও কিন্তু আমাদের চোখের আশেপাশের এরিয়ার মাসলগুলো মুভ করে। রেগুলার এই মুভমেন্ট বা স্ট্রেসের কারণে চোখের এই এরিয়াতে ড্রাইনেস এর সাথে সাথে ইলাস্টিসিটির অভাব হতে পারে যা রিংকেলস পড়ার অন্যতম একটি কারণ। আর এই প্রবলেম থেকে মুক্তি পেতে দরকার নিয়মিত আই ক্রিমের ব্যবহার।সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে আমাদের ত্বক ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায় যার প্রভাব চোখের আশেপাশের এরিয়াতেও দেখা যায়। এই সান ড্যামেজ থেকেই ধীরে ধীরে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায়। মূলত এই কারণেই চোখের নিচে রিংকেল এবং ফাইন লাইন ক্রিয়েট হয়। আই ক্রিমে থাকা নির্দিষ্ট কিছু উপাদান কোলাজেন বুস্ট আপ করে যা স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
উপকারিতা
আই ক্রিম ব্যবহারের ফলে আমরা ৫টি উপকার পেতে পারিঃ১. ফাইনলাইন এবং রিঙ্কেল দূর হয়আমাদের চোখের ত্বক অনেক বেশি কোমল ও নমনীয় হওয়ায় মুখের অন্যান্য জায়গার ত্বকের চেয়ে চোখের চারপাশের ত্বক অনেক বেশি তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায়। তাই চোখের ত্বকের সঠিক যত্ন না নিলে অচিরেই ফাইন লাইন, রিঙ্কেল, ডার্ক সার্কেল, পাফিনেস দেখা দিতে পারে। অনেক সময় বয়স বাড়ার আগেই আপনার ত্বককে আরো বুড়িয়ে দিতে পারে। তাই একটি ভালো মানের আই ক্রিম আপনাকে এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।২. ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেমূলত চোখের চারপাশের ত্বকের নমণীয়তার কথা মাথায় রেখেই আই ক্রিম গুলো বিশেষ ভাবে করে তৈরি করা হয়। যার কারণে এটি তুলনামূলক ময়েশ্চারাইজার (moisturizer)-এর চেয়ে আই ক্রিম গুলো বেশ গাঢ় হয় এবং চোখের ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য এতে তেলের পরিমাণও একটু বেশি থাকে। এর বিশেষ উপাদানগুলো আপনার চোখের ত্বককে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।৩. ত্বকের কোলাজেন-এর মাত্রা বাড়ায়সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনী রশ্মির আমাদের ত্বকে কোলাজেন (collagen)-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। ত্বককে মসৃণ রাখতে কোলাজেনের গুরুত্ব অপরিসীম।কারণ কোলাজেনের অভাবেই আমাদের চোখে ফাইন লাইন ও রিঙ্কেল এর মত সমস্যা বেশি দেখা দেয়। আই ক্রিমে থাকা ভিটামিন C ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায়। তাই রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ভিটামিন C সমৃদ্ধ আই ক্রিম ব্যবহারে এসব সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন।৪. ডার্ক সার্কেল দূর করেডার্ক সার্কেল অনেকের কাছেই একটি বিভীষিকার নাম। বেশি রাত জাগা, জীনগত কারণ, রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করা বা একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর ত্বকে ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে। ভিটামিন B-৩ ডার্ক সার্কেল কমানোর এক জাদুকরি সমাধান। তাই যারা ডার্ক সার্কেল নিয়ে চিন্তিত তারা ভিটামিন B-৩ সমৃদ্ধ আই ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।৫. পাফিনেস বা চোখের ফোলাভাব দূর করেবর্তমানে পাফিনেস বা চোখের নিচে ফোলাভাব আমাদের অনেকেরই বড় একটা সমস্যা। মূলত চোখের ত্বকের নিচে অতিরিক্ত পানি জমার কারণেই এই ফোলাভাবের সৃষ্টি হয়। আসল বয়সের তুলনায় নিজেকে আরো বেশি বয়স্ক দেখায়। অনেক সময় মেকআপ করলেও এই ফোলাভাব লুকানো যায়না বরং চোখের ত্বক ঝুলে গিয়ে চোখের সৌন্দর্যটাই মাটি হয়ে যায়। । পাফিনেস বা চোখের ফোলাভাব দূর করার ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক অনেক বেশি কার্যকর। তাই ভালো ফল পেতে আই ক্রিমটি ব্যবহারের আগে কিছুক্ষণ ফ্রীজে রেখে ব্যবহার করুন।
আই ক্রিম ব্যবহারের যে ভুলগুলো আমরা করে থাকি
আই ক্রিম ব্যবহার করার প্রধান উদ্দেশ্য হল চোখের ক্লান্তি, ফোলাভাব, বলিরেখা, কালচে দাগ দূর কার। তবে একটু ভূলের কারণে হতে পারে অনেক বেশি ক্ষতি। এডুকেশন অফ ক্লারিন্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট Kristi Cella বলেন, “সঠিক উপায়ে আই ক্রিম ব্যবহার করা হলে বয়সের ছাপ, ফোলাভাব, বলিরেখা ইত্যাদি নানাসমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে কিছু সাধারণ ভুলের কারণে উপকারের তুলনায় ক্ষতিই হতে পারে।” সাধারণত আই ক্রিম ব্যবহারে যে ভূল গুলো আমরা প্রায় করে থাকি তার একটা বর্ণনা দেওয়া হল। বেশি পরিমাণে ক্রিম ব্যবহার করাঅনেকেই আমরা মনে করি যে বেশি পরিমান আই ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ধারনাটা একদমই ভূল। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আই ক্রিম ব্যবহার করলে চোখে অস্বস্থি অনুভূত হতে পারে। এমনকি চোখ ফুলেও যেতে পারে। তাই সবসময় অল্প পরিমাণে আইক্রিম ব্যবহার করা উচিত। এক ফোঁটা পরিমাণ আই ক্রিমই আপনার চোখের যত্নে যথেষ্ঠ। তবে যদি প্রথমবার ব্যবহারের পরও ত্বক শুষ্ক মনে হয় এবং আবারও ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে তবে প্রথমবার ব্যবহারের পর অন্তত পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে আবার ক্রিম লাগাতে ব্যবহার করতে হবে।ঘষাঘষি করাআমরা জানি যে চোখের চারপাশের ত্বক খুবই সেনসিটিভ ও কোমল হয়। তাই অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা এবং ঘষাঘষি করা বেশ ক্ষতিকর।পরিমাণ মতো ক্রিম আঙুলে নিয়ে, হালকাভাবে চোখের নিচে এবং চারপাশে ম্যাসাজ করুন।চোখের নিচে ও উপরের পাতায় ক্রিম লাগানোযদি আপনি চোখের নিচে এবং উপরের পাতায় ক্রিম সরাসরি লাগান তাহলে চোখ ফুলে যেতে পারে। তাই চোখের খানিকটা নিচে এবং ভ্রুয়ের অংশে ক্রিম লাগালেই তা চোখের চারপাশে ছড়িয়ে যাবে।
কীভাবে আই ক্রিম বাছাই করবেন
দিনের বেলায় বাহিরে বের হওয়ার সময় সান প্রোটেকশনটা বড় একটা ফ্যাক্টর। আর রাতের বেলায় ত্বকে ক্রিমরে উপাদান গুলো অ্যাবজরব হওয়াটা অনেক জরুরি। তাই দিনের জন্য অন্তত SPF ৩০ যুক্ত আই ক্রিম নির্বাচন করুন। কারণ এজ স্পট বা অন্যান্য দাগছোপ কমাতে SPF যুক্ত আই ক্রিম খুব উপকারি। আর যে সকল আই ক্রিমে SPF নেই এমন আই ক্রিম রাতের জন্য নির্বাচন কুরন। যেহেতু রাতে ত্বক অনেক বেশি ময়েশ্চারাইজার অ্যাবজরব করে তাই কোন কারণে চোখের নিচের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে আই ক্রিম সেটা কমিয়ে ফেলতে সক্ষম।
উপসংহার
চোখের ত্বকেই বয়সের ছাপ সবার আগে ফুটে ওঠে। সূক্ষ্ম বলি রেখা, সামান্য কুঞ্চন, চোখের চারপাশে ফোলাভাব আপনাকে জানান দেয় যে আপনি বুড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক সময় অগোছালো জীবন যাপন, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অথবা স্ট্রেসজনিত কারণেও চোখের ত্বকে ছাপ পড়তে পারে। চোখের নিচের ত্বক অত্যন্ত সেনসিটিভ আর নমণীয় হওয়ার কারণে সাধারণ ময়েশ্চারাইজ়ার বা ক্রিম দিয়ে এ সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আর এ জন্যই প্রয়োজন আই ক্রিমের বিশেষ যত্ন। আই ক্রিম ব্যবহারে খুব সহযেই বলিরেখা, ডার্ক সার্কল, বিবর্ণভাব,ফোলাভাব কমিয়ে চোখের ত্বক উজ্জল করা সম্ভব। তবে শুধু আই ক্রিম দিয়ে স্থায়ী সমাধান খুঁজলে চলবে না।রাতে ভালো করে ঘুমান, মন শান্ত রাখুন, যথাসম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং রোদে বেরোনোর সময় অবশ্যই সানক্রিম,সানগ্লাস বা ছাতা ব্যবহার করুন। ত্বক সুস্থ রাখুন, নিজে সুস্থ থাকুন আর আপনার চোখকে করে তুলন উজ্জ্বল,সতেজ এবং আরো আকর্ষণীয়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।https://mumolifestyle.com/shop-3/