সিরাম এবং ময়েশ্চারাইজারের মধ্যে পার্থক্য কি?

সিরাম এমন একটা প্রোডাক্ট যা খুব ছোট ছোট মলিকিউলস দিয়ে তৈরী। যার কারণে এটি আপনার ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। মলিকিউলস গুলো শক্তিশালী উপাদান দিয়ে তৈরী যা খুব দ্রুত কার্যকরী ভূমিকা রাখে আপনার স্কিনকেয়ারে। অন্যদিকে ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে, সেটি ধরে রাখতে এবং ত্বকের উপরে একটি হাল্কা অদৃশ্য আস্তরণ তৈরি করে ত্বকে উপস্থিত পানির অণুকে ধরে রাখে। সরাম খুব হালকা হয়ে থাকে আর ময়েশ্চারাইজার খানিকটা ঘন হয়ে থাকে। ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজ়ারের আগে সিরাম ব্যবহার করতে হয়।ময়েশ্চারাইজার ত্বকের প্রতিটি কোষে কোষে ঢুকে ক্ষত নিরাময় করে। এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ত্বকের উপরিভাগের ক্ষত নিরাময় করে। আপনার ত্বক যেমনই হোক না কেন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ময়েশ্চারাইজারেরগুরুত্ব অপরিসীম। এক কথাই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ময়েশ্চারাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিরাম ত্বকের গভীরে গিয়ে বলিরেখা বা নিষ্প্রাণ ত্বকের বেশকিছু সমস্যার সমাধান করে। আর ময়েশ্চারাইজ়ার সিরামের উপর একটা আস্তরণ তৈরি করে সিরামের গুণগুলিকে রক্ষা করে। সিরাম এবং  ময়েশ্চারাইজারের মধ্যে পার্থক্য জানার আগে চলুন সিরাম এবং  ময়েশ্চারাইজার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

সিরাম কি

সিরাম এমন একটা প্রোডাক্ট যা খুব ছোট ছোট মলিকিউলস দিয়ে তৈরী। যার কারণে এটি আপনার ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। মলিকিউলস গুলো শক্তিশালী উপাদান দিয়ে তৈরী যা খুব দ্রুত আপনার স্কিনকেয়ারে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সিরাম ত্বকের গভীরে গিয়ে বলিরেখা বা নিষ্প্রাণ ত্বকের বেশকিছু সমস্যার সমাধান করে। হার্ভার্ড ওমেন’স হেলথ ওয়াচ এর প্রাক্তন নির্বাহী সম্পাদক,Kelly Bilodeau এর মতে ”সিরাম হল হালকা, সহজে শোষিত তেল- বা পানি-ভিত্তিক তরল যা আপনি আপনার ত্বকে ছড়িয়ে দেন। এগুলি সাধারণত একটি ড্রপার সহ ছোট বোতলে আসে এবং আপনার পুরো মুখের চিকিত্সার জন্য আপনার কেবল কয়েকটি ড্রপ দরকার।এতে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইটস, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন, হরমোন ; এবং কোনও বহিরাগত পদার্থ (যেমন, ঔষধ বা অণুজীব)। এছাড়াও রয়েছে শ্বেত রক্তকণিকা (লিউকোসাইটস), লোহিত রক্তকণিকা (এরিথ্রোসাইটস), অণুচক্রিকা এবং ক্লটিং ফ্যাক্টর। 

সিরাম ব্যবহারের নিয়ম

সিরাম সাধারনত কোনও উপাদানকে ত্বকের গভীরে সহজেই পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা। সরাসরি ত্বকে কাজ করে বলে সিরাম ব্যবহারের ফল হয় দারুন। আপনার ত্বক পরিষ্কার এবং টোন করার পরে, আপনার ত্বকের শৈল্পীক রূপান্তরের জন্য সিরাম একটি যুগান্তকারী সমাধান। বিশেষত, কালোদাগ, বলিরেখা, কোঁচকানোভাব বা শুষ্কতা ইত্যাদির মোকাবিলা করে সিরাম। তাই, ত্বক পরিষ্কার করার পর এবং ময়েশ্চারাইজ়ার লাগানোর আগে সিরাম ব্যবহার করা উচিত। সিরামগুলি  শক্তিশালী উপাদানের সংমিশ্রন যা  আপনার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে  ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জিবীত করে। শুষ্ক ত্বকের জন্য সিরামগুলি আপনার ত্বককে গভীরভাবে হাইড্রেট করে, অন্যদিকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সিরামগুলি সিবাম উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখে। 

ময়েশ্চারাইজার কি

ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে, সেটি ধরে রাখতে এবং ত্বকের উপরে একটি হাল্কা অদৃশ্য আস্তরণ তৈরি করে ত্বকে উপস্থিত পানির অণুকে ত্বকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। ক্রিমের তুলনায় ময়েশ্চারাইজার খানিকটা ঘন হয়।ময়েশ্চারাইজার পানির পরিমান বেশি থাকার কারণে ত্বকের প্রতিটি কোষে কোষে ঢুকে ক্ষত নিরাময় করে।১১০০ দশকে জার্মানির বিনজেনে  হিলডেগার্ড নামক এক ভদ্র মহিলা,যিনি সেন্ট হিলডেগার্ড নামেও পরিচিত, নিজের ত্বককে সতেজ রাখার জন্য একটি ঘরোয়া রেসিপি তৈরী করেন। তিনি ফুটন্ত পানিতে বার্লি রান্না করে সেটা ছেঁকে মুখে লাগিয়ে তাজা “বাষ্পযুক্ত” অনুভূতি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে এটাই পৃথিবীর প্রথম ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ঘটনা। এজন্য আমরা বলতে পারি ময়েশ্চারাইজারের আবিষ্কারক হচ্ছেন জার্মানির বিনজেনের  হিলডেগার্ড  ।

ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহারের নিয়মঃ 

ত্বকের যত্নে কসমেটিক্স পণ্যগুলির সঠিক ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত সক্রিয় উপাদান কার্যকর হওয়ার জন্য ডার্মিসে প্রবেশ করে। তাই সঠিক উপায়ে পণ্য প্রয়োগ না করলে  সক্রিয় উপাদানগুলি ত্বকের ভেতরে কোন প্রভাব ফেলবেনা। সাধারণত দিনের শুরুতে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও দুপুরে গোসলের পর ত্বকের কোষ অনেক নরম হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সেই সময় শরীরে আদ্রতা বজায় রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময়ে কাজের পর আমাদের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে আমাদের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেইসওয়াস বা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে তারপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আবারো ত্বক ভালো করে ফেইসওয়াস বা ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে তা কিছুটা ড্রাই হলে ত্বকে টোনার, সিরাম ব্যবহারের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে অনেক ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃহাওয়ার্ড সোবেলএর মতে আমাদের ত্বকের 24/7 আর্দ্রতা প্রয়োজন। রাতে আমাদের শরীর সবচেয়ে বেশী আর্দ্রতা হারায়। যখন আপনি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের প্রতিরক্ষামূলক স্তরটি হারাবেন, তখন আপনার ত্বকও আর্দ্রতা হারাবে। আর তাই রাতারাতি ময়েশ্চারাইজার দিয়ে আর্দ্রতার ক্ষতি পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাতে আমাদের ত্বক রিপিয়ার মুডে থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ্য কোষগুলি মেরামত এবং পুনর্নির্মাণ করার সঠিক সময় হলো রাত। কারন গভীর  ঘুমের সময় বেশিরভাগ কোষের টার্নওভার এবং পুনর্জন্ম ঘটে। 

সিরাম ও ময়েশ্চারাইজারের পার্থক্য কি

সিরাম এবং ময়েশ্চারাইজার উভয়ই স্কিন কেয়ার পণ্য। কিন্তু তারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজ করে এবং প্রত্যেকের নিজস্ব আলাদা ফর্মুলেশন রয়েছে। সিরাম ও ময়েশ্চারাইজারের মূল পার্থক্য গুলো নিম্নরুপঃ 

উদ্দেশ্যগত পার্থক্যঃ 

সিরাম হল হালকা ওজনের, দ্রুত শোষণকারী তরল যা সক্রিয় উপাদানগুলির উচ্চ ঘনত্বের সাথে তৈরি করা হয়। এগুলি নির্দিষ্ট ত্বকের উদ্বেগগুলির যত্ন নেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যেমন ফাইন লাইন, বলি, কালো দাগ, ব্রণ বা ডিহাইড্রেশন। এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সিরামগুলি ত্বকের গভীরে সক্রিয় উপাদানগুলির একটি শক্তিশালী ডোজ সরবরাহ করে।অন্যদিকে, ময়েশ্চারাইজারগুলি হাইড্রেট এবং ত্বকের আর্দ্রতা বাধা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়। ময়েশ্চারাইজারে সাধারণত পানি, ইমোলিয়েন্টস এবং অক্লুসিভের সংমিশ্রণ থাকে যা ত্বকে আর্দ্রতা ধরে  রাখতে এবং লক করতে সাহায্য করে। ময়েশ্চারাইজারগুলি ত্বকের পৃষ্ঠে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর সরবরাহ করে এবং ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রেখে আর্দ্রতা হ্রাস রোধ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

গঠন এবং সামঞ্জস্য গত পার্থক্যঃ 

সিরামগুলি সাধারণত পাতলা, হালকা ওজনের এবং পানিযুক্ত বা পানির মতো সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে। এগুলি দ্রুত ত্বকে শোষিত হয়, যা এগুলিকে অন্যান্য স্কিনকেয়ার পণ্যগুলির সাথে লেয়ারিংয়ের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।   অন্যদিকে ময়েশ্চারাইজার সাধারনত ক্রিম, লোশন, জেল এবং মলম সহ বিভিন্ন আকারে আসে। সিরামের তুলনায় ময়েশ্চারাইজার অনেক ঘন হয়ে থাকে যার উল্লেখযোগ্য টেক্সচার রয়েছে এবং আর্দ্রতা সিল করার জন্য আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনের চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

উপকরণ গত পার্থক্যঃ 

সিরামগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পেপটাইড, ভিটামিন (যেমন ভিটামিন সি বা রেটিনল) এবং হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মতো সক্রিয় উপাদান দিয়ে প্যাক করা হয়। এই উপাদানগুলি তাদের নির্দিষ্ট ত্বকের যত্নের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয় যেমন ত্বক উজ্জ্বল করা, অ্যান্টি-এজিং, বা ব্রণের বিরদ্ধে লড়াই করার বৈশিষ্ট্য।অপরদিকে ময়েশ্চারাইজারগুলিতে হাইড্রেশন সরবরাহ করা এবং ত্বকের পৃষ্ঠে একটি বাধা তৈরি করার  উপাদানগুলির মিশ্রণ থাকে। আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য এতে রয়েছে হিউমেক্ট্যান্ট (যেমন গ্লিসারিন এবং হায়ালুরোনিক অ্যাসিড), ত্বককে নরম এবং মসৃণ করার জন্য ইমোলিয়েন্টস (যেমন তেল এবং ফ্যাটি অ্যাসিড), এবং আর্দ্রতা বন্ধ করার জন্য অক্লুসিভস (যেমন শিয়া বাটার বা পেট্রোলিয়াম জেলি)। 

ব্যবহার গত পার্থক্যঃ

সিরাম সাধারণত ত্বক পরিষ্কার এবং টোনিংয়ের পরে ব্যবহার করা হয় যা  সিরামের সক্রিয় উপাদানগুলিকে কার্যকরভাবে ত্বকে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। অপরদিকে সিরাম বা অন্যান্য চিকিত্সার পরে আপনার ত্বকের যত্নের রুটিনের চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসাবে ময়েশ্চারাইজারগুলি প্রয়োগ করা হয়। তারা পূর্ববর্তী পণ্যের সুবিধা লক করতে সাহায্য করে এবং একটি প্রতিরক্ষামূলক বাধা প্রদান করে।মোটকথা সিরাম এবং ময়েশ্চারাইজারগুলি ত্বকের যত্নের রুটিনে পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। সিরামগুলি নির্দিষ্ট উদ্বেগের সমাধানের জন্য সক্রিয় উপাদানগুলির উচ্চ ঘনত্বের সাথে লক্ষ্যযুক্ত চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়, পক্ষান্তরে ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বাধা রক্ষার জন্য ময়েশ্চারাইজার অপরিহার্য। একটি ভাল স্কিনকেয়ার রুটিনের জন্য, আপনি একটি সিরাম এবং একটি ময়েশ্চারাইজার উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন।   ১০০% অথেনটিক  এবং নিত্যনতুন স্কিন কেয়ার পণ্য কিনতে ক্লিক করুন এখানে https://mumolifestyle.com/product-category/skincare-items/?v=fbd25224d617   Facebook Page : https://www.facebook.com/MumoLifeStyle123

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *