সিরাম শব্দটার সাথে কম বেশী আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আমাদের সবার মধ্যেই সিরাম নিয়ে হাজারো প্রশ্ন থাকে। যেমন, সিরাম কখন এবং কেন ব্যবহার করবেন? ময়েশ্চারাইজার কিংবা ক্রিম ব্যবহার করলে সিরামের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না ? আবার অনেকে তো মনে করে সিরাম মানেই বাড়তি খরচ। আজকের এই ব্লগ টি সম্পূর্ণ পড়লেই সিরাম নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। সিরাম কেন ব্যবহার করবেন এটা জানার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে সিরাম কি?? তাহলে চলুন জানা যাক। সিরাম এমন একটা প্রোডাক্ট যা খুব ছোট ছোট মলিকিউলস দিয়ে তৈরী। যার কারণে এটি আপনার ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। মলিকিউলস গুলো শক্তিশালী উপাদান দিয়ে তৈরী যা খুব দ্রুত কার্যকরী ভূমিকা রাখে আপনার স্কিনকেয়ারে। সিরাম ব্যবহার করতে হবে ময়েশ্চারাইজ়ারের আগে ত্বক পরিষ্কার করে। সিরাম ত্বকের গভীরে গিয়ে বলিরেখা বা নিষ্প্রাণ ত্বকের বেশকিছু সমস্যার সমাধান করে। আর ময়েশ্চারাইজ়ার সিরামের উপর একটা আস্তরণ তৈরি করে সিরামের গুণগুলিকে রক্ষা করে।
সিরাম কি
প্রাক্তন নির্বাহী সম্পাদক, হার্ভার্ড ওমেন’স হেলথ ওয়াচ, Kelly Bilodeau এর মতে ”সিরাম হল হালকা, সহজে শোষিত তেল- বা জল-ভিত্তিক তরল যা আপনি আপনার ত্বকে ছড়িয়ে দেন। এগুলি সাধারণত একটি ড্রপার সহ ছোট বোতলে আসে এবং আপনার পুরো মুখের চিকিত্সার জন্য আপনার কেবল কয়েকটি ড্রপ দরকার।” এতে রয়েছেঃ ইলেক্ট্রোলাইটস, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন, হরমোন ; এবং কোনও বহিরাগত পদার্থ (যেমন, ঔষধ বা অণুজীব)। এছাড়াও রয়েছে শ্বেত রক্তকণিকা (লিউকোসাইটস), লোহিত রক্তকণিকা (এরিথ্রোসাইটস), অণুচক্রিকা এবং ক্লটিং ফ্যাক্টর।
কেন সিরাম ব্যবহার করবেন
আপনি যদি মনে করেন আপনার বর্তমান স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট আপনার ত্বককে সজীব ও প্রানউজ্জল করতে পারছেনা তখনই আপনি সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক পরিস্কার করার পর যখন ত্বকে ভেজা ভাব থাকে তখন সিরাম ব্যবহার করতে হয়। সিরাম ব্যবহার করতে হয় খুব অল্প পরিমাণ। পাঁচ ফোটার বেশী না। ত্বকে সিরাম ব্যবহারের ফলাফল বেশীরভাগ সময় সাথে সাথেই পাওয়া যায়। এটা দিনে একবার ব্যবহার করলেই চলে।
কত ধরনের সিরাম আছে?
ত্বক পরিচর্যায় সাধারনত ৩ ধরনের সিরাম আছে।১। হাইড্রেটিং সিরাম ২। ব্রাইটেনিং সিরাম ৩। রিপেয়ারিং সিরাম 1. হাইড্রেটিং সিরামপ্রতিটি ত্বকের যত্নে হাইড্রেশন একটি মূল উপাদান। মুখের যত্নে হাইড্রেটিং সিরাম আপনার ত্বকের জন্য বিস্ময়করভাবে কাজ করে। এটি আপনার ত্বককে মোলায়েম এবং হাইড্রেটেড করে। হাইড্রেটিং সিরামের সেরা উপাদানগুলির মধ্যে একটি হলো হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। ত্বকের জন্য প্রধান হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল জলে নিজের ওজন 1000x পর্যন্ত ধরে রাখার ক্ষমতা। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বাতাস থেকে আর্দ্রতা টেনে আনে যা আপনার ত্বককে সতেজ রাখে। ময়েশ্চারাইজারের সাথে হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করলে এর প্রভাবগুলি বৃদ্ধি পাবে এবং হাইড্রেশনের একটি অতিরিক্ত স্তর সরবরাহ করবে।2. ব্রাইটেনিং সিরামযদি আপনার ত্বক নিস্তেজ এবং শুষ্ক বোধ হয়, একটি ব্রা্টেনিং সিরাম আপনার ত্বককে রূপান্তরিত করবে। একটি ব্রা্টেনিং সিরাম ত্বকের কালো দাগ এবং পিগমেন্টেশন হ্রাস করে আপনার ত্বককে করে তুলবে আরো উজ্জ্বল এবং প্রানবন্ত। ভিটামিন সি হল সেরা উপাদানগুলির মধ্যে একটি যা আপনার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি- আপনার গায়ের রং মসৃণ করে, বয়স বা রোদের দাগ হ্রাস করে, এবং হাইপারপিগমেন্টেশন হ্রাস করতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং UV রশ্মির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দ্বিগুণ করে এবং আপনার ত্বকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ভিটামিন সি সিরাম হল একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মুখের সিরাম, যা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং কালো দাগ ও ব্রণের দাগ কমায়।3. রিপেয়ারিং সিরামসিরামের জগতে আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আপনাকে এটি দিয়ে শুরু করার পরামর্শ দেব। নিয়াসিনামাইড সিরাম জাদুর মতো কাজ করে। এটিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সংবেদনশীল ত্বককে প্রশমিত করে, কোলাজেন উত্পাদনকে উদ্দীপিত করে এবং আপনার ত্বকের কোষগুলির টার্নওভারের হারকে বাড়িয়ে তোলে। নিয়াসিনামাইডের অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে আপনার ত্বকের লিপিড বাধাকে শক্তিশালী করার ক্ষমতা, লালভাব কমানো, ছিদ্র সংকুচিত করা, তেলের অত্যধিক উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া, সূর্যের ক্ষতি মেরামত করা, ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখার লক্ষণগুলিকে হ্রাস করা।মুখের সিরামের 5 টি ভিন্ন প্রকারে হয়
- ব্রাইটেনিং সিরাম।
- ব্রণ ফাইটিং সিরাম।
- হাইড্রেটিং ফেস সিরাম।
- এক্সফোলিয়েটিং ফেস সিরাম।
- রিপিয়ারিং এবং রিনিউইং ফেস সিরাম.
কিভাবে সিরাম ব্যবহার করবেন
কোনও উপাদানকে ত্বকের গভীরে সহজেই পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হয় সিরাম। সরাসরি ত্বকে কাজ করে বলে সিরাম ব্যবহারের ফল হয় দারুন। আপনার ত্বক পরিষ্কার এবং টোন করার পরে, আপনার ত্বকের শৈল্পীক রূপান্তরের ক্ষেত্রে সিরাম একটি যুগান্তকারী সমাধান। বিশেষত, কালোদাগ, বলিরেখা, কোঁচকানোভাব বা শুষ্কতা ইত্যাদির মোকাবিলা করে সিরাম। তাই, ত্বক পরিষ্কার করার পর এবং ময়েশ্চারাইজ়ার লাগানোর আগে সিরাম ব্যবহার করা উচিত। সিরামগুলি শক্তিশালী উপাদানের সংমিশ্রন যা আপনার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জিবীত করে। শুষ্ক ত্বকের জন্য সিরামগুলি আপনার ত্বককে গভীরভাবে হাইড্রেট করে, অন্যদিকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সিরামগুলি সিবাম উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
সিরামের কাজ/সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য/গুণ
ত্বকের সমস্যা ও ত্বকের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের সিরাম তৈরি করা হয়। সিরামের কার্যকারিতা এবং সুবিধাদির উপর ভিত্তি করে এটি ত্বকের জন্য প্রণয়ন করা হয়।
- ময়শ্চারাইজিং/এন্টি-শুষ্কতা
- সুদিং
- অ্যান্টি এজিং
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- রিপেয়ারিং।
- রিভাউভড।
- প্রোটেক্টিভ।
- এক্সফোলিয়েটিং/রিসারফেসিং।
একটি বডি সিরাম, একটি সমৃদ্ধ বডি ক্রিমের মতোই হাইড্রেটিং এবং পুষ্টিকর। এটি ত্বকে আর্দ্রতা আনতে হাইলুরোনিক অ্যাসিড, ত্বকের কোষের সর্বোত্তম কার্যকারিতার জন্য প্যানথেনল (যা ভিটামিন বি 5 হিসাবে জানেন) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ নীল শেত্তলা দিয়ে পরিপূর্ণ।
বয়স ভেদে সিরামের ব্যবহার
আমাদের প্রত্যেকের স্কিনই আলাদা এবং বয়সের সাথে সাথে আমাদের স্কিন পরিবর্তন হয়। যেহেতু বয়সের সাথে সাথে স্কিনের ধরনও পরিবর্তন হয় তাই আমাদেরও উচিত বয়সভেদে স্কিন কেয়ার করা । কারণ স্কিন যখন ম্যাচিউর হতে থাকে, তখন তার কেয়ারের ধরনটাও সেই অনু্যায়ী ভিন্ন হওয়া উচিত। ক্লেনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং-এর রেগ্যুলার রুটিন ফলো করার পাশাপাশিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন কেয়ারে ভিন্নতা আনাটা গুরুত্বপূর্ণ। বয়স যত বাড়বে স্কিনের টেক্সচার চেঞ্জ হবে, রিংকেল পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। সঠিক স্কিন কেয়ার করেও সেটাকে আগের অবস্থানে ফেরত আনা যায় না,, তবে হেলদি লুকিং স্কিন বলে যে কথা টা আছে, সেটাতো অ্যাচিভ করা যেতেই পারে,তাই না? আর এর জন্য, বয়সভেদে স্কিন কেয়ার করার দিকে নজর দেয়াটাও ইম্পরট্যান্ট। তার জন্যে জেনে নেয়া দরকার যে কিভাবে বয়সভেদে স্কিন কেয়ার মেনটেইন করতে হবে।প্রথমেই যে বিষয়টার উপরে গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে বয়সভেদে স্কিন কেয়ার করার জন্য স্কিনের টাইপটাকে বোঝা। এতে করে, আপনি স্কিন কেয়ারের জন্য কী ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন, তা বুঝতে পারবেন এবং প্রোডাক্টগুলো আপনার স্কিনের জন্য সঠিক হবে। আপনার স্কিনের টাইপ কী? নরমাল, ড্রাই, অয়েলি নাকি কম্বিনেশন? এটা জানতে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে একটা টেস্ট করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে মুখের স্কিনে হাত বুলিয়ে দেখুন। যদি, আপনার স্কিন সফট ফিল হয়, তেমন ব্লেমিশ বা প্যাচ না থাকে এবং স্কিনে অয়েল ব্যালেন্সড থাকে, তবে আপনার নরমাল স্কিন। আর যদি স্কিনটা স্মুদ ফিল না হয়, ড্রাই প্যাচ, ডাল ফিল হয়, তবে আপনার স্কিন টাইপ ড্রাই। আর যদি স্কিন তৈলাক্ত ফিল হয়, পিম্পল, ব্রেক আউটস, পোরস ইত্যাদি থাকে, তবে আপনার স্কিন টাইপ অয়েলি। আপনার স্কিনের টি-জোন যদি তৈলাক্ত হয় এবং ফেইসের অন্য অংশগুলো শুষ্ক হয়, তবে আপনার কম্বিনেশন স্কিন।
স্কিন কেয়ারে ফেস সিরামের ব্যবহার
দিনে এবং রাতে আপনার স্কিন কেয়ার রুটিন কখনওই এক রকম হবে না। দিনে এবং রাতে কোন পদক্ষেপ এবং পণ্যগুলি ব্যবহার করা উচিত তা বেছে নেওয়া বেশ কঠিন। আপনার ত্বকের যত্ন নেওয়া যেমন জরুরী তেমনি সঠিক পণ্য নির্ণয় করাটাও জরুরী। বর্তমানে ত্বকের যত্নকে কেন্দ্র করে অনেক তথ্য পাওয়া যায়,যার কারনে আপনি বুঝতে পারেন না কোনটা করা উচিত আর কোনটা উচিত নয়। সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরন করলে আপনি নিজের ত্বককে করে তুলতে পারবেন স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল । কোন স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করতে হবে তা নিয়ে ফিটনেস ট্রেনার ইয়াসমিন করাচিওয়ালা এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ জয়শ্রী শারদ তাদের ইন্টাগ্রামে সুন্দর একটি পোষ্ট করেছেন যা অনুসরণ করলে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে পারেন এবং এটা সহজ ও কার্যকর!AM রুটিনে ৪টি ধাপ:
- ধাপ 1: পরিষ্কার করা
- ধাপ 2: সিরাম প্রয়োগ করুন
- ধাপ 3: ময়েশ্চারাইজ করুন
- ধাপ 4: সানস্ক্রিন লাগান
PM রুটিনে ৫টি ধাপ:
- ধাপ 1: আপনার মেকআপ সরান
- ধাপ 2: পরিষ্কার করা
- ধাপ 3: চোখের নিচের সিরাম প্রয়োগ করুন
- ধাপ 4: ফেস সিরাম প্রয়োগ করুন
- ধাপ 5: টার্গেটেড ক্রিম প্রয়োগ করুন
কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করবেন
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনের কোলাজেনের মাত্রা কমার কারনে ত্বকে ক্ষতির মাত্রাও বাড়তে থাকে। ফলে ত্বকে রিঙ্কেলস ও ফাইন লাইনস সৃষ্টি হয় এবং ত্বক কুঁচকে যায় বা ক্ষেত্রবিশেষে ঝুলে পড়ে। ফলে ত্বক হারায় তারুণ্যতা, লাবন্যতা এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। সিরাম ত্বকে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ত্বকের স্বাস্থ্য সুন্দর, উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করতে স্কিনের প্রয়োজনীয় সব সক্রিয় ও শক্তিশালী উপাদান সরবরাহ করে থাকে সিরাম। প্রয়োগ করামাত্রই এর উপকারিতা দৃশ্যমান হয়। তাই, স্কিনকেয়ারে গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্যের নাম হচ্ছে সিরাম। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। স্কিনকেয়ারে তাই যত্নের সাথে বাছাই করে নিতে হবে সঠিক সিরাম। আর সেজন্য আগে জেনে নিতে হবে কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করা উচিত বা জরুরী? নাহলে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানোর মতোই হবে আপনার অবস্থা। সিরামের মতো জাদুকরী প্রোডাক্ট ব্যবহারে করেও পাবেন না তেমন কোন উপকারিতা। চলুন জেনে নেই কোন ত্বকের যত্নে কোন সিরাম বেশি কার্যকরী! নরমাল স্কিন এই ধরণের ত্বকে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় থাকে সবসময়ই। বেশি অয়েলিও না আবার বেশি শুষ্কও না। নরম আর মসৃণ থাকে সারাবছর জুড়ে। তবে যত্নের অভাবে ত্বক হয়ে উঠতে পারে শুষ্ক ও রুক্ষ। যেসব সিরাম সব ধরনের স্কিন টাইপসের জন্য প্রযোজ্য, সেসব সিরাম নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যাবে নরমাল স্কিনে। তবে রেটিনল আর ভিটামিন সি সম্পন্ন সিরাম ব্যবহার করাটাই বেশি ভালো। কেননা, দুটি উপাদানই বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে এবং স্কিনের তারুণ্যতা বজায় রাখতে দারুণ কাজ করে। আর ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখে।ড্রাই স্কিন রুক্ষ, খসখসে এবং অমসৃণ ত্বক মানেই ড্রাই স্কিন। আর্দ্রতার অভাবে ড্রাই স্কিন বিবর্ণ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। আর শুষ্ক থাকার দরুণ স্কিনে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এই ধরণের ত্বকের যত্নে হায়ালুরোনিক এসিড এবং গ্লিসারিন সম্পন্ন সিরাম অত্যন্ত কার্যকরী। গ্লিসারিনের কারণে এটি শুষ্ক ত্বকে যেমন দ্রুত শুষে যাবে তেমনই হায়ালুরোনিক এসিড স্কিনকে হাইড্রেট রাখতে এবং রিঙ্কেলস দূর করতে সাহায্য করবে। কম্বিনেশন স্কিন মূলত অয়েলি এবং ড্রাই স্কিন, এই দুটো স্কিন টাইপ মিলেই কম্বিনেশন স্কিন। যেসব স্কিনের কপাল, নাক এবং থুতনি খুব সহজেই অয়েলি হয়ে যায় অথচ গাল বা ফেইসের অন্যত্র শুষ্কই থাকে সেটাকেই কম্বিনেশন স্কিন বলা যায়। যেহেতু কম্বিনেশন স্কিনে ড্রাই এবং অয়েলি ভাব দুইই বজায় থাকে সেহেতু এমন একটি উপাদান ব্যবহার করা উচিত যা দুটি অবস্থাতেই সমানভাবে স্কিনের স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখে। আর রেটিনল হচ্ছে কম্বিনেশন স্কিনের জন্য একদম পারফেক্ট। কারণ এটি ত্বককে অতিরিক্ত অয়েলিও করে না আবার ড্রাইও করে ফেলে না। বরং এটি কম্বিনেশন স্কিন থেকে রিঙ্কেলস আর বয়সের ছাপ কমিয়ে স্কিনকে করে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়। একনি প্রোন স্কিন একনি প্রোন স্কিনে মূলত ব্রণ একটি আতঙ্কের নাম। কারণ পোরসগুলো বন্ধ হয়ে স্কিনে ব্রেকআউট দেখা দেয়। ফলে স্কিনে দেখা দেয় ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডসের মতো অনেক ধরনের সমস্যা। একনি প্রোন স্কিনে পোরস বন্ধ করাটা জরুরী, তাই পোরস মিনিমাইজ করে এমন সিরাম ব্যবহার করা ভালো। এছাড়াও, স্যালিস্যালিক এসিড সম্পন্ন সিরাম ব্যবহারে ত্বকের সব ইমপিউরিটিস দূর হয়। অল স্কিন টাইপ অল স্কিন টাইপ মানে সব ধরণের ত্বকেই কিছু প্রাথমিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন – কালো দাগ, ব্রণের দাগ ও ক্ষত, স্ট্রেচ মার্ক, মেছতা, মেছতার দাগ ইত্যাদি। এসব দূর করা চিরতরে দূর করা না গেলেও কন্ট্রোল করা যায়। এক্ষেত্রে এমন সিরাম ব্যবহার করুন যেগুলোতে নিয়াসিনামাইড, আরবুটিন এবং ভিটামিন সি সংমিশ্রন রয়েছে।
কোন সিরাম আপনার জন্য বাছাই করবেন

স্কিনের সমস্যাকে টার্গেট করে কোন প্রোডাক্টটি সবচেয়ে ভালো সল্যুশন দিবে তা বুঝে উঠাটাই মুশকিলের ব্যাপার। স্কিন কেয়ারের যেই প্রোডাক্টটি নিয়ে কম বেশি আমরা সবাই বেশ কনফিউজড হই তা হল, ফেইস সিরাম! টিনএজ পার করার পর পর স্কিন কেয়ারে সিরাম ব্যবহার করাটা জরুরি, এতে খুব পাওয়ারফুল ইনগ্রেডিয়েনন্টস থাকে, যা আমাদের স্কিনের স্প্যাসিফিক কিছু সমস্যাকে টার্গেট করে কাজ করে। কোন সিরামটি আপনার জন্যে কীভাবে বুঝবেন? সিরামে থাকা কোন ইনগ্রেডিয়েনন্টস এর কাজ কি সেটা আমরা অনেকেই জানি না। তাই, আজকে আমরা জেনে নিবো কোন ইনগ্রেডিয়েনন্টস থাকলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন তা আপনার কোন সমস্যার সল্যুশন দিতে পারবে তা নিয়ে।
সিরামে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্টস
একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে স্কিন কেয়ার রুটিনে সিরাম রাখাটা মাস্ট। ফেস ওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার বা স্ক্রাবের মত সিরামও শখের চেয়ে আমাদের স্কিনের জন্যে প্রয়োজনটাই বেশি হয়ে পরে। কোন সিরামটি আপনার জন্যে এবং আপনার সমস্যাকে টার্গেট করে কাজ করবে তা বুঝতে পারাটা জরুরি। পাশাপাশি কোন ইনগ্রেডিয়েনন্ট কী কাজ করে তা না জেনে প্রোডাক্ট ইউজ করাটাও উচিৎ নয়। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে বুঝবেন কোন সিরামটি আপনার জন্যে তা নিয়ে।
(১) সিরামে থাকা “নিয়াসিনামাইড” এর কাজ কী?
• মূলত,নিয়াসিনামাইড ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশনকে বুস্ট করতে সাহায্য করে।• নিয়াসিনামাইড ‘সিরামাইড’নামের লিপিড তৈরিতে সাহায্য করে, যা আমাদের স্কিনের বাইরের প্রোটেক্টিভ লেয়ারটাকে মেনটেইন করে।• রিঙ্কেলস আর ফাইন লাইনস কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।• এটি পোরস মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে।• স্কিনকে স্মুথ, ময়েশ্চারাইজড আর হেলদি রাখে।• অতিরিক্ত অয়েলি স্কিনে নিয়াসিনামাইড স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন কনট্রোল করতে হেল্প করে।• স্কিনের রেডনেস কমাতে সাহায্য করে।• স্কিনকে একদমই সান সেনসিটিভ করে না।• একনে বা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।তাই, যাদের স্কিন অতিরিক্ত অয়েলি, ওপেন পোরস এররয়েছে, মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে বা ব্রণের প্রবণতা রয়েছে তারা খুব সহজেই নিশ্চিন্তে নিয়াসিনামাইড আছে এমন সিরাম সিলেক্ট করে স্কিন কেয়ারে রাখতে পারেন।
(২) সিরামে থাকা “আলফা আরবিউটিন” এর কাজ কী?
• আলফা আরবিউটিন একটি সেইফ ব্রাইটেনিংইনগ্রেডিয়েন্ট যা ফেইসের হাইপার-পিগমেন্টেশন বা পিগমেন্টেশন এর মত সমস্যার চমৎকার সল্যুশন দেয়।• স্কিনের ডার্ক স্পট বা নানা রকম দাগ কমাতে সাহায্য করে।• স্পট কমিয়ে স্কিনকে ব্রাইট করে। ন্যাচারাল গ্লো আনতে সাহায্য করে।• স্কিনকে আনইভেন থেকে ইভেন করতে সাহায্য করে।• ফেইসের একনে স্কারস বা পুরানো দাগ কমিয়ে আনে।• ব্লেমিশ বা রেডনেস এর সমস্যায় এটি বেস্ট চয়েজ।• সেনসিটিভ স্কিনেও নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।“আলফা আরবিউটিন” নামটা আমাদের পরিচিত হলেও আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের স্কিনে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিলে আলফা আরবিউটিন যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে হবে। তাই, মুলত যাদের ফেইসে নানা রকম স্পট বা দাগ রয়েছে তা কমিয়ে আনতে আলফা আরবিউটিন যুক্ত সিরাম হতে পারে রাইট চয়েজ।
(৩) সিরামে থাকা “ভিটামিন সি” এর কাজ কী?
• স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ও ড্যামেজ রিপেয়ার করতে ভিটামিন C অনেক উপকারি। তাই ড্যামেজড স্কিন সেলগুলোকে রিপেয়ার করার জন্য ভিটামিন C সিরাম ব্যবহার করুন।• বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।• স্কিনের মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে স্কিনে ন্যাচারাল গ্লোয়িং ইফেক্ট প্রদান করে।• স্কিনের নানা রকম দাগ কমাতে সাহায্য করে।• ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।• স্কিনকে স্মুথ করে।স্কিন কেয়ারে ভিটামিন C খুবই কার্যকরী একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট। তাই যাদের স্কিনের গ্লো হারিয়ে গেছে, ফ্যাকাসে বা মলিন হয়ে গেছে, নানা কারণে ড্যামেজ হয়ে গেছে তারা চেষ্টা করবেন ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে।
(৪) সিরামে থাকা “ল্যাকটিক অ্যাসিড” এর কাজ কী?
• ল্যাকটিক অ্যাসিড রিংকেলস এর সমস্যা সমাধানে চমৎকার সল্যুশন।• স্কিনে স্ক্রাবিং এর কাজ করে। • ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।• ফ্রেকেলস এর সমস্যায় বেস্ট একটি সিরাম।• ঠোঁটের পাশের কালচে দাগ দুর করতে সাহায্য করে।• মুখে অনেক দিনের পুরানো দাগ বা পিগমেন্টেশনের প্রবলেম কমায়।ল্যাকটিক অ্যাসিড খুবই পাওয়ারফুল একটি ইনগ্রেডিয়েন্টস। যেহেতু এটি পিলিং এবং স্কিনে স্ক্রাবিং এর কাজ করে থাকে, তাই সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। ভালো রেজাল্ট পাওয়ার জন্যে যেকোন একবেলা অ্যাপ্লাই করলেই যথেষ্ট। সাধারণত রাতের বেলা অ্যাপ্লাই করাই ভালো।
সতর্কতা
সিরাম ত্বকের গভীরে গিয়ে কাজ করে এবং সবচেয়ে ভালো ফলাফল দেয়। তবে ভুল উপায়ে এর ব্যবহার কেবল অর্থের অপচয় মাত্র। কাজেই সিরাম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।এক্সফলিয়েট করতে ভুলে যাওয়াত্বকের মৃত কোষ দূর করতে এক্সফলিয়েট করা আবশ্যক। এটা ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে এবং সিরামের কার্যকারিতা বাড়াতেও সহায়তা করে। লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রতিষ্ঠিত সৌন্দর্যবিদ জিনা মারিওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ত্বক এক্সফলিয়েট করা গভীরে প্রসাধনী প্রবেশকরতে ও কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।” তবে প্রতিদিন এক্সফলিয়েট করা ক্ষতিকর, তাই ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুতিনবার এক্সফলিয়েট করাই যথেষ্ট।
ভুল ধাপ অনুসরণ
নামি দামি প্রসাধনী ব্যবহারের পরেও ভালো ফলাফল না পাওয়ার অন্যতম কারণ হল ভুল ধাপে তা ব্যবহার করা। লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রতিষ্ঠিত সৌন্দর্যবিদ জিনা মারির মতে, ”প্রথমে মুখ ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে, প্রয়োজন হলে এক্সফলিয়েট করতে হবে। এরপর টোনার ব্যবহার করে ত্বককে সেরাম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে নিতে হবে। প্রতিটা ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরে পাঁচ থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। আর শেষে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে বলে জানান তিনি।”প্রেশার দিয়ে ব্যবহার না করে স্মুথলি ব্যবহার করাসিরাম হাতে নিয়ে মুখে মালিশ করে ব্যবহার করা বেশ আরামদায়ক কিন্তু তা কার্যকর নয়। সেরামের উপযুক্ত ব্যবহার হলো, তা হাতে নিয়ে মুখে হালকা চাপ দিয়ে দিয়ে ব্যবহার করা। জিনা মারি বলেন, “সিরাম ব্যবহারের সময় তা সর্বদা উপরের দিকে গতিশীলভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং মালিশ করা বাদ দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “গাতিশীলভাবে ও চাপ দিয়ে ব্যবহার করা হলে তা অল্প পণ্যে বেশি উপকারিতা দেয়।”
উপকরণের মিশ্রণ
ত্বকের যত্নে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার মানেই উপকারী তা কিন্তু নয়। একাধিক সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর মিশ্রণের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। অন্যথায় ত্বকে জ্বলুনি দেখা দিতে পারে, যেমন- রেটিনল এবং ভিটামিন C একত্রে ব্যবহার। জিনা মারির মতে, “একাধিক পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যে কোনো একটা পণ্য ব্যবহার করা ও তার সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা ।” বাজারে অনেক সিরাম পাওয়া যায় যা একসঙ্গে ভালো কাজ করে। তাই ভালমত যাচাই করে ভালো কাজ করবে এমন সিরাম কেনা উচিত।শরীরের বাহ্যিক সৈান্দর্য্যটাই আমাদেরকে একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সৈান্দর্যেরও পরিবর্তন ঘটে যা আমাদের সবারই দুঃচিন্তার কারন হয়ে দাড়ায়। ফলে আমরা প্রায়শই ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে থাকি। সৈান্দর্যের যেন কোন কমতি না থাকে সে জন্যই সিরাম হতে পারে সব সময়ের বন্ধু। আপনার সমস্যার কথা মাথায় রেখেই আমি চেষ্টা করেছি সিরাম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারনা দিতে। আশা করছি সম্পূর্ণ ব্লটি পড়ে আপনি আপনার সমস্যার সমাধানগুলো পেয়ে গেছেন। ভাল থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আর নিজের ত্বকের যত্ন নিবেন। website: https://mumolifestyle.com/product/beauty-of-joseon-glow-serum-30ml/