সিরাম এমন একটা প্রোডাক্ট যা খুব ছোট ছোট মলিকিউলস দিয়ে তৈরী। যার কারণে এটি আপনার ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। মলিকিউলস গুলো শক্তিশালী উপাদান দিয়ে তৈরী যা খুব দ্রুত কার্যকরী ভূমিকা রাখে আপনার স্কিনকেয়ারে। সিরাম ত্বকের গভীরে গিয়ে বলিরেখা বা নিষ্প্রাণ ত্বকের বেশকিছু সমস্যার সমাধান করে। আমাদের আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো ত্বকে সিরামের ব্যবহার বা ত্বকে সিরাম কিভাবে কাজ করে এবং সিরাম ব্যবহার বন্ধ করে দিলে আসলে আমাদের ত্বকের কোন ক্ষতি হয় কি না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সিরামে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্টস বা উপাদানের কাজ
একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে স্কিন কেয়ার রুটিনে সিরাম রাখাটা মাস্ট। ফেস ওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার বা স্ক্রাবের মত সিরামও শখের চেয়ে আমাদের স্কিনের জন্যে প্রয়োজনটাই বেশি হয়ে পরে। কোন সিরামটি আপনার জন্যে এবং আপনার সমস্যাকে টার্গেট করে কাজ করবে তা বুঝতে পারাটা জরুরি। পাশাপাশি কোন ইনগ্রেডিয়েনন্ট কী কাজ করে তা না জেনে প্রোডাক্ট ইউজ করাটাও উচিৎ নয়। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক, সিরামে থাকা কোন উপাদান কি কাজ করে।
(১) সিরামে থাকা নিয়াসিনামাইড ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশনকে বুস্ট করতে সাহায্য করে। নিয়াসিনামাইড ‘সিরামাইড’নামের লিপিড তৈরিতে সাহায্য করে, যা আমাদের স্কিনের বাইরের প্রোটেক্টিভ লেয়ারটাকে মেনটেইন করে। এই সিরাম রিঙ্কেলস আর ফাইন লাইনস কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটি পোরস মিনিমাইজ করে স্কিনকে স্মুথ, ময়েশ্চারাইজড আর হেলদি রাখে। যাদের ত্বক অতিরিক্ত অয়েলি স্নিয়াসিনামাইড তাদের স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন কনট্রোল করে। তাই, যাদের স্কিন অতিরিক্ত অয়েলি, ওপেন পোরস এররয়েছে, মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে বা ব্রণের প্রবণতা রয়েছে তারা খুব সহজেই নিশ্চিন্তে নিয়াসিনামাইড আছে এমন সিরাম সিলেক্ট করে স্কিন কেয়ারে রাখতে পারেন।
(২) সিরামে থাকা “আলফা আরবিউটিন” একটি সেইফ ব্রাইটেনিংইনগ্রেডিয়েন্ট যা ফেইসের হাইপার-পিগমেন্টেশন বা পিগমেন্টেশন এর মত সমস্যার চমৎকার সল্যুশন দেয়। এই সিরাম স্কিনের ডার্ক স্পট বা নানা রকম দাগ কমিয়ে স্কিনকে ব্রাইট করে। ন্যাচারাল গ্লো আনতে সাহায্য করে।ত্বকের একনে স্কারস বা পুরানো দাগ কমিয়ে ব্লেমিশ বা রেডনেস এর সমস্যায় এটি বেস্ট চয়েজ যা সেনসিটিভ স্কিনেও নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
(৩) সিরামে থাকা “ভিটামিন সি” স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ও ড্যামেজ রিপেয়ার করতে অনেক উপকারি। তাই ড্যামেজড স্কিন সেলগুলোকে রিপেয়ার করতে,বয়সের ছাপ দূর করতে, স্কিনের মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে স্কিনে ন্যাচারাল গ্লোয়িং ইফেক্ট আনতে এবং স্কিনের নানা রকম দাগ দূর করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন C সিরাম ব্যবহার করুন।স্কিন কেয়ারে ভিটামিন C খুবই কার্যকরী একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট। তাই যাদের স্কিনের গ্লো হারিয়ে গেছে, ফ্যাকাসে বা মলিন হয়ে গেছে, নানা কারণে ড্যামেজ হয়ে গেছে তারা চেষ্টা করবেন ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে।
(৪) সিরামে থাকা “ল্যাকটিক অ্যাসিড” রিংকেলস এর সমস্যা সমাধানে চমৎকার সল্যুশন। এই সিরাম স্কিনে স্ক্রাবিং এর কাজ করে ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফ্রেকেলস এর সমস্যা এবং ঠোঁটের পাশের কালচে দাগ দুর করতে বেস্ট একটি সিরাম। এই সিরাম নিয়মিত বাবহারে মুখের অনেক দিনের পুরানো দাগ বা পিগমেন্টেশনের প্রবলেম কমে যায়।ল্যাকটিক অ্যাসিড খুবই পাওয়ারফুল একটি ইনগ্রেডিয়েন্টস। যেহেতু এটি পিলিং এবং স্কিনে স্ক্রাবিং এর কাজ করে থাকে, তাই সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। ভালো রেজাল্ট পাওয়ার জন্যে যেকোন একবেলা অ্যাপ্লাই করলেই যথেষ্ট। সাধারণত রাতের বেলা অ্যাপ্লাই করাই ভালো।
সিরাম আমাদের ত্বকে কিভাবে কাজ করে
সিরামে থাকা সক্রিয় উপাদানগুলির ঘনীভূত ডোজ আমাদের ত্বকের নির্দিষ্ট উদ্বেগগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে। সিরাম আসলে কিভাবে আমাদের ত্বকে কাজ করে তা এখানে বর্ণনা করা হল।
(১) ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিমের তুলনায় সিরামগুলি ছোট অণু দিয়ে তৈরি করা হয়, যার কারণে এগুলো খুব সহজেয় ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। সিরামের সক্রিয় উপাদানগুলি ত্বকের গভীর স্তরগুলিতে পৌঁছাতে সক্ষম আর সেজন্যই আগুলো আমাদের ত্বকে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
(২) সিরামে সক্রিয় উপাদানগুলির উচ্চ ঘনত্ব থাকে যা ত্বকের নির্দিষ্ট উদ্বেগগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে। তবে এই উপাদানগুলি সিরামের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
(৩) সিরামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বা ফেরুলিক অ্যাসিড, বাহ্যিক পরিবেশের ক্ষতি এবং ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
(৪) সিরামে থাকা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড একটি হাইড্রেটিং উপাদান যা ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফলে ত্বক হয় মোটা এবং ময়েশ্চারাইজড।
(৫) সিরামে থাকা পেপটাইডস কোলাজেন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
(৬) সিরামে থাকা রেটিনল হল ভিটামিন এ এর একটি রূপ যা এর অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি ত্বকের কোষের টার্নওভারকে উন্নত করে ত্বকের গঠন উন্নত করতে পারে।
(৭) সিরামে থাকা নিয়াসিনামাইড হল ভিটামিন বি 3 এর একটি রূপ যা ত্বকের লালভাব, ব্রণ এবং অমসৃণ ত্বকের স্বর সহ বিভিন্ন ত্বকের উদ্বেগের সমাধান করতে পারে।
(৮) সিরামে থাকা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHAs) এবং বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (BHAs) হল এক্সফোলিয়েটিং অ্যাসিড যা মৃত ত্বকের কোষগুলিকে অপসারণ করতে, পোরস বা ছিদ্রগুলি বন্ধ করতে এবং ত্বকের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে।
(৯) সিরাম মূলত ত্বকের নির্দিষ্ট উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেমন সূক্ষ্ম রেখা, বলি, কালো দাগ, ব্রণ বা অসম ত্বকের স্বর। সিরামের সক্রিয় উপাদানগুলি বার্ধক্যের লক্ষণগুলি হ্রাস করে, ত্বক উজ্জ্বল করে এবং সামগ্রিক ভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ত্বকে কার্যকরভাবে সিরাম ব্যবহার করতে, প্রথমে আপনার মুখ পরিষ্কার করুন এবং তারপরে আপনার ত্বকে অল্প পরিমাণে সিরাম প্রয়োগ করুন। ক্ষতিগ্রস্থ জায়গাগুলিতে ফোকাস করে ত্বকে আলতো করে প্যাট করুন বা ম্যাসাজ করুন। ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন (দিনের সময়) প্রয়োগ করার আগে সিরাম বাবয়াহ্র করে এক বা দুই মিনিট অপেক্ষা করুন।মোটকথা আপনার ত্বকের যত্নের নির্দিষ্ট চাহিদা এবং উদ্বেগের সাথে মেলে এমন একটি সিরাম বেছে নেওয়া অপরিহার্য। তবে আপনার মুখে একটি নতুন সিরাম ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একটি প্যাচ পরীক্ষা করতে পারেন যাতে এটি আপনার ত্বকে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারে।
সিরাম ব্যবহার বন্ধ করলে কি ত্বকের কোন ক্ষতি হবে

আসলে আপনার ত্বকের ধরন ও অবস্থা কেমন তার উপর নির্ভর করে যে সিরাম ব্যবহার বন্ধ করলে আপনার ত্বকের কোন ক্ষতি হবে কি না। যদিও সিরাম ব্যবহার বন্ধ করলে তাৎক্ষণিক ভাবে ত্বকের কোনো সরাসরি ক্ষতি নাও হতে পারে, তবে সিরামের মতো উপকারী স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার বন্ধ করার প্রভাব সময়ের সাথে সাথে ত্বকের চেহারা এবং টেক্সচারে পরিবর্তন আনতে পারে।সিরামে কিছু সক্রিয় উপাদান থাকে যা ত্বকের নির্দিষ্ট উপকারিতা, যেমন হাইড্রেশন, অ্যান্টি-এজিং ইফেক্ট, বা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে। এই ধরনের সিরাম ব্যবহার বন্ধ করার ফলে ত্বকে ধীরে ধীরে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,আপনি যদি একটি হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করেন তবে তা ব্যবহার করা বন্ধ করার পরে আপনার ত্বক সময়ের সাথে সাথে শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।একটি স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখার জন্য সব সময় সিরামের প্রয়োজনী হয় না। তবে একটি ভালো স্কিন কেয়ার রুটিন বজায় রাখার জন্য সিরামের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে আপনি যদি আপনার স্কিন কেয়ারে সিরামের ব্যবহার বন্ধ করতে চান, তাহলে আপনার ত্বকের উপর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি বোঝার জন্য এবং আপনার ত্বকের প্রয়োজনের সাথে আরও উপযুক্ত হতে পারে এমন বিকল্প পণ্য বা স্কিনকেয়ারের সঠিক পদ্ধতিগুলি জানার জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্কিনকেয়ার স্পেশালিষ্টের সাথে পরামর্শ করুন। ১০০% অথেনটিক এবং নিত্যনতুন স্কিন কেয়ার পণ্য কিনতে ক্লিক করুন এখানে https://mumolifestyle.com/product-category/skincare-items/?v=fbd25224d617