আমরা প্রত্যেকেই একটি সুস্থ,প্রনবন্ত,তারুণ্যময় উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কত কিছুই না করি। ত্বকের উজ্জ্বলতা সাধারনত জেনেটিক্স কারণ, ত্বকের যত্নের অনুশীলন এবং একজন মানুষের জীবনধারার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। অভ্যন্তরীণ (প্রাকৃতিক বার্ধক্য প্রক্রিয়া এবং জেনেটিক্স সম্পর্কিত) এবং বহিরাগত (বাহ্যিক কারণ এবং জীবনধারা পছন্দের সাথে সম্পর্কিত) বিভিন্ন কারণে ত্বকের প্রাকৃতিক আভা বা উজ্জ্বলতা হারিয়ে যেতে পারে।আমাদের আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো কোন কোন খাবার নিয়মত খেলে আমাদের ত্বক মসৃণ, সুন্দর, উজ্জ্বল ও প্রনবন্ত থাকবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বক কাকে বলে এবং প্রতদিন কোন কোন খাবার গুলো গ্রহন করা উচিত।
ত্বক কি
ত্বক বা স্কিন(Skin)হল শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ এবং শরীরের সমগ্র বাহ্যিক পৃষ্ঠকে আবৃত করে। এটি তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত, এপিডার্মিস(Epidermis),ডার্মিস(Dermis) এবং হাইপোডার্মিস(Hypodermis), এই তিনটিই তাদের অ্যানাটমি এবং ফাংশনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়।
কোন কোন খাবার ত্বককে মসৃণ ও সুন্দর রাখে

একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য যে খাবার গুলো প্রতিদিন খাওয়া উচিত সেগুলো নিম্নরুপঃ
প্রোটিনঃ ত্বকের গঠন ও স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রোটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় নিয়মিত মাংস,মাছ, ডাল,দুধ,দই এবং প্রোটিন শেক অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
ফল এবং সবজিঃ ফল এবং সবজি শক্তি সরবরাহ করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এগুলি অধিক পরিমাণে ভিটামিন, মিনারল, এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ফাইবারঃ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের প্রাকৃতিক বাঁধ শক্ত করে যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। সাধারনত ফল,সবজি,অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার, ওটস এবং বিভিন্ন গাছের মূল বা শেকড়ে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট খাবারঃ এন্টি-অক্সিডেন্ট যৌগগুলি ত্বককে বাহিরের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করে এবং ত্বক থেকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করে ত্বকের ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখে। সাধারনত ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি, শাকাহারু, অলিভ অয়েল, গাজর, ব্রোকলি, এবং মিষ্টি প্রজাতির লাল ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে।
পানিঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করারা কারণে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে। এছাড়াও পানি শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও যৌবন ধরে রাখে।
আন্টি-ইনফ্লামেটরি খাবারঃ আন্টি-ইনফ্লামেটরি খাবার ত্বকের ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে অলিভ অয়েল, টুমেরিক, গাজর, ফুলকলি এবং পুদিনা।
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমঃ আপনার ত্বককে সুন্দর,উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত রাখার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান প্রয়োজন। তা না হলে ত্বকের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন। আপনার ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই খাবার গুলো অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। কারণ এই খাবার গুলো আপনার ত্বকের ভালো স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
ত্বক ভালো রাখার উপায়
ভারতের আয়না স্কিন ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা ডা. সিমাল সোইন বলেন, “ত্বক মসৃণ ও সুন্দর ভালো রাখতে উজ্জ্বল রংয়ের সবজি, টক-জাতীয় খাবার, পরিষ্কার পানীয়, প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কার্যকর।” তিনি আরও বলেন “কোনো কারণে এগুলো পাওয়া না গেলে ভিটামিন সি ট্যাবলেট, মাছের তেলের ক্যাপ্সুল ও কোলাজেন পাউডার গ্রহণ করা যেতে পারে।”ত্বক ভালো রাখার উপায় বর্ননা করতে গিয়ে তিনি আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন যা নিম্নরুপঃ
হলুদ: বহু বছর আগে থেকেই ঘরোয়া রূপচর্চায় হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলুদে রয়েছে জ্বালা ও ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান যা ত্বকের নানাবিধ সমস্যা ও ‘ব্রেক আউট’ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও হলুদ একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান যা বয়সের ছাপ কমিয়ে দেয় এবং ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ভালো ফলাফল পেতে খালি পেটে হলুদ-পানির মিশ্রণ পান করতে পারেন।
বিট: বিট হল লৌহ সমৃদ্ধ উপাদান যা, রক্ত পরিশোধনে খুব ভালো কাজ করে যার কারণে আমাদের ত্বক মসৃণ ও সুন্দর দেখতে উজ্জ্বল লাগে। এতে আছে ভিটামিন এ এবং সি, যা ত্বকে প্রাকৃতিক পুষ্টির যোগান দিয়ে ত্বকের দাগ,ছোপ দূর করে ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন বিটের তৈরি জুস বা সিদ্ধ বিট খেলে ভালো উপকার পেতে পারেন।
টমেটো: টমেটোতে আছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বকের কোষের ক্ষয় কমায়, ত্বক টান টান ও তারুণ্যময় রাখতে সহায়তা করে। এর প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের গুণ সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি’ ‘সিবাম’ বা ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের ব্রণ কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন টমেটোর সালাদ বা সুপ খেতে পারেন।
আখরোট: আখরোটকে ‘মস্তিষ্কের খাবার’ বলা হয় যা ত্বক মসৃণ ও সুন্দর জন্য খুব ভালো কাজ করে। এটা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটের ভালো উৎস যা বিষাক্ত পদার্থের কারণে হওয়া কোষের ক্ষয় রোধ করে। বাদাম ত্বককে সুন্দর রাখে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে যার কারণে ত্বকের বয়সের ছাপ দূর হয় এবং উজ্জ্বল্পতা বৃদ্ধি পায়।তাই প্রতিদিন সকালে বা বিকালের নাস্তা হিসেবে বাদাম খেতে পারেন।
সূর্যমুখীর বীজ: সূর্যমুখির বীজে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই থাকে যা ‘ফ্রি রেডিক্যাল’য়ের কারণে হওয়া কোষের ক্ষয় কমায়। তাই এটা খুব ভালো ‘অ্যান্টি এইজিং’ হিসেবে কাজ করে। সংক্রমণের কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি ও অস্বস্তি কমাতে এর তুলনা নেই। এটাকে সালাদ, সকালের নাস্তা বা সবজি হিসেবে ভেজে খেতে পারেন। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজ ব্লেন্ড করে অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বককে প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের দাগ ছোপ কমায়। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের কোষকলা উৎপাদন করে ত্বককে টানটান রাখে ও ত্বকের গঠন সুন্দর করে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন ই’ ত্বককে তারুণ্যময় ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সালাদে মিষ্টি আলু ব্যবহার করে খাবার তালিকায় যোগ করতে পারেন।
চিয়া বীজ: ত্বকের পুষ্টি যোগাতে চিয়া বীজ খেতে পারেন। চিয়া বীজ ওমেগা-থ্রি ফ্যাট, ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। এগুলো ত্বকের বলিরেখা কমায়,সংক্রমণ কমায় এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রেখে উজ্জ্বলতা বাড়াই। সারা রাত চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করতে পারেন। ত্বক ভালো রাখতে হলে সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিনের পাশাপাশি সঠিক খাবার খাওয়া খুবই জরুরী। কারণ আপনি যদি সঠিক খাবার গ্রহন না করেন তাহলে যে স্কিন কেয়ার রুটিনই ব্যবহার করেন না কেন তাতে কোন উপকার হবেনা। মোট কথা ত্বক ভালো রাখতে প্রাকৃতিক এই খাবার গুলোর কোন বিকল্প নেই। তাই আপনার ত্বককে সুন্দর,উজ্জ্বল এবং প্রনবন্ত রাখতে এই খাবার গুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। ১০০% অথেনটিক এবং নিত্যনতুন স্কিন কেয়ার পণ্য কিনতে ক্লিক করুন এখানেhttps://mumolifestyle.com/product-category/skincare-items/?v=fbd25224d617