কম্বিনেশন স্কিন বা সংমিশ্রন ত্বক হল এমন এক ধরনের ত্বক যেখানে মুখের বিভিন্ন জায়গায় একই সাথে তৈলাক্ততা এবং শুষ্কতা দেখা দেয়। সংমিশ্রণ ত্বকের লোকেরা সাধারণত টি-জোনে বেশি তৈলাক্ততা অনুভব করে, যেমন কপাল, নাক এবং চিবুক। কম্বিনেশন স্কিনের যত্ন নেওয়াটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং কারণ মুখের বিভিন্ন জায়গায় আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। আমাদের আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো কম্বিনেশন বা সংমিশ্রন ত্বক কি, কেন আমাদের ত্বক কম্বিনেশন টাইপ হয় এবং কিভাবে এর যত্ন নিতে হয়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সকল বিষয় গুলো।
কম্বিনেশন বা সংমিশ্রণ ত্বক কি
এটি ত্বকের এমন আক অবস্থা যা শুষ্ক এবং তৈলাক্ত উভয় ত্বকের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। আমাদের ত্বকের সেবেসিয়াস এবং ঘাম গ্রন্থিগুলির কাজের ধরন এক না হওয়ার কারণে এমন হয়ে থাকে। এমন ত্বকে বেশি তেলযুক্ত অঞ্চলটি সাধারণত টি-জোন (কপাল, নাক এবং চিবুক) হিসেবে পরিচিত যা সব সময় তৈলাক্ত থাকে এবং গালের ত্বক স্বাভাবিক বা শুষ্ক থাকে।
ত্বক কেন কম্বিনেশন টাইপ হয়
সাধারনত জেনেটিক্স, হরমোনের পরিবর্তন, পরিবেশগত অবস্থা এবং ত্বকের সঠিক যত্নের অভাবে আমাদের ত্বকের ধরন কম্বিনেশন হতে পারে। জেনেটিক্স ফ্যাক্টর ত্বকের ধরন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনার পিতামাতা বা নিকটাত্মীয়দের কম্বিনেশন বা সংমিশ্রণ ত্বক থাকে তবে আপনারও এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি,মাসিক,গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে ত্বকে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন মুখের কিছু অংশে তেলের উৎপাদন বাড়াতে পারে, যার কারণে আমাদের ত্বক কম্বিনেশন ত্বকের দিকে ধাবিত হয়।পরিবেশগত অবস্থা,জলবায়ু এবং আর্দ্রতাও আমাদের ত্বককে প্রভাবিত করতে পারে।
শুষ্ক জলবায়ুতে ত্বক যেমন শুষ্ক হয়ে যায় আবার আর্দ্র পরিবেশে ত্বকের তৈলাক্ততা বৃদ্ধি পায়।এছাড়াও অনুপযুক্ত স্কিনকেয়ার পণ্য বা কঠোর ক্লিনজার ব্যবহার ত্বকের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করে ফেলে। বয়সের সাথে সাথে আমাদের ত্বকেরও ধরন পরিবর্তন ঘটে। যৌবনে যার ত্বক তৈলাক্ত থাকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার ত্বক সংমিশ্রণ বা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।এছাড়াও মানসিক চাপ, অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টির অভাব বা আপনার খাদ্যের ভারসাম্যহীনতার কারনেও ত্বকের ধরন কম্বিনেশন বা সংমিশ্রন হয়ে থাকে।
কিভাবে কম্বিনেশন ত্বকের যত্ন নেবেন

কম্বিনেশন স্কিনের যত্ন নেওয়াটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং কারণ মুখের বিভিন্ন জায়গায় আলাদা ভাবে যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই কম্বিনেশন বা সংমিশ্রণ ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য এমন একটি স্কিনকেয়ার রুটিনের প্রয়োজন যা তৈলাক্ত এবং শুষ্কতা উভয় ক্ষেত্রেই সমাধান করে। কম্বিনেশন বা সংমিশ্রণ ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য এখানে একটি সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন বর্ননা করা হলঃ
জেন্টেল ক্লিনজিংঃ ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক না করে ময়লা, তেল এবং মেকআপ অপসারণ করতে একটি হালকা, পিএইচ-ব্যালেন্সড ক্লিনজার ব্যবহার করুন। সকালে এবং সন্ধ্যায় নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন।
এক্সফোলিয়েশনঃ ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সপ্তাহে 1-2 বার আপনার স্কিঙ্কেয়ার রুটিনে একটি মৃদু এক্সফোলিয়েটর যোগ করুন। এটি ত্বকে আটকে থাকা ছিদ্রগুলি গভীর ভাবে পরিস্কার করে ত্বককে করবে মসৃণ। ত্বকের শুষ্কতা এড়াতে অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েট করা থেকে বিরত থাকুন।
টোনিংঃ ত্বকের পিএইচ মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে মৃদু, অ্যালকোহল-মুক্ত টোনার ব্যবহার করুন। এমন একটি পণ্য বেছে নিন যা ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি না করেই ত্বককে হাইড্রেট করবে।
ময়েশ্চারাইজ করুনঃ একটি হালকা ওজনের, নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যা ত্বকের পোরস বা ছিদ্র না আটকে ত্বককে হাইড্রেট করবে। প্রয়োজনে তৈলাক্ত এবং শুষ্ক এলাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
সানস্ক্রিনঃ যে কোন আবহাওয়াতে প্রতিদিন সকালে বাহিরে যাওয়ার সময় কমপক্ষে SPF 30 সহ একটি ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
স্পট ট্রিট্মেন্টঃ আপনার ত্বকে যদি ব্রণ বা দাগ থাকে তবে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়াইল পারক্সাইডের মতো উপাদান দিয়ে লক্ষ্যযুক্ত স্পট ট্রিট্মেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের যে যে অংশে প্রয়োজন শুধুমাত্র সে সব জায়গায় ব্যবহার করুন।
একটি সঠিক সামঞ্জস্য পূর্ণ স্কিনকেয়ার রুটিনঃ আপনার ত্বকের যত্নের রুটিন এমন ভাবে তৈরি করুন যা আপনার মুখের বিভিন্ন এলাকার নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ করবে। যেমন আপনার ত্বকের শুষ্ক এলাকার জন্য আরও হাইড্রেটিং পণ্য এবং তৈলাক্ত এলাকার জন্য একটি হালকা পণ্যের প্রয়োজন হতে পারে।
ডীপ হাইড্রেশনঃ আপনার শরীর এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখার জন্য হাইড্রেশন অপরিহার্য।
ব্যালেন্স ডায়েটঃ আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে ফল, শাকসবজি এবং সমৃদ্ধ সুষম খাবার খান। ওমেগা -3 এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড এবং আখরোটে পাওয়া যায়, ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ ব্যায়াম, ধ্যান, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো স্ট্রেস-কমানোর যোগ ব্যায়াম গুলি নিয়মিত অনুশীলন করুন। কারণ উচ্চ চাপের মাত্রা হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করুনঃ বিভিন্ন পণ্য এবং পরিবেশগত অবস্থার কারণে আপনার ত্বক কিভাবে প্রতিক্রিয়া করে সেটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজনে আপনার স্কিনকেয়ার রুটিন সামঞ্জস্য করুন এবং আপনার ত্বকের যে কোনও পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হন।
কম্বিনেশন ত্বকের জন্য সঠিক সিরাম
কম্বিনেশন বা সংমিশ্রণ ত্বকের জন্য এমন একটি সিরাম বেছে নিতে হবে যা ত্বকে কোন রকম ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি না করেই আপনার মুখের তৈলাক্ত এবং শুষ্ক উভয় জায়গাকেই সঠিক ভাবে মেরামত করবে। কম্বিনেশন স্কিন বা সংমিশ্রণ ত্বকের জন্য সিরামে যে উপাদান গুলো থাকা খুবই জরুরী তা নিম্নরূপঃ
হায়ালুরোনিক অ্যাসিডঃ এই হাইড্রেটিং উপাদানটি আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা ত্বকের শুষ্ক এলাকার জন্য উপকারী। এটি হালকা ওজনের এবং ত্বকের ছিদ্র আটকায় না তাই এটি কম্বিনেশন ত্বকের জন্য খুবই উপযুক্ত।
নিয়াসিনামাইড (ভিটামিন বি৩)ঃ নিয়াসিনামাইড বহু গুণে সমৃদ্ধ একটি উপাদান। এটি তেল উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ত্বকের প্রাকৃতিক বাঁধাকে উন্নত করে এবং ত্বকের জালা-পোড়া দূর করে। এটি ত্বকের তৈলাক্ত এবং শুষ্ক উভয় এলাকার জন্য উপযুক্ত।
স্যালিসিলিক অ্যাসিডঃ আপনার ত্বকের তৈলাক্ত বা ব্রণ-প্রবণ এলাকায় স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত একটি সিরাম ব্যবহার করুন যা ত্বকের ছিদ্রগুলিকে এক্সফোলিয়েট এবং বন্ধ করতে সাহায্য করবে। তবে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা রোধ করতে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করুন।
গ্লাইকলিক অ্যাসিডঃ গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো একটি আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) দিয়ে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করলে ত্বকের টেক্সচার মসৃণ হয়। এটি শুষ্ক এবং তৈলাক্ত উভয় অঞ্চলের জন্যই উপযুক্ত, তবে অতিরিক্ত শুষ্কতা এড়াতে অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি তৈলাক্ত এবং শুষ্ক উভয় জায়গার জন্যই উপকারী এবং ত্বকের টোনকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
জোজোবা তেলঃ জোজোবা তেল একটি হালকা ওজনের এবং নন-কমেডোজেনিক তেল যা অতিরিক্ত তৈলাক্ততা সৃষ্টি না করে ত্বকের শুষ্ক অঞ্চলে হাইড্রেশন প্রদান করে।
লিকোরিস রুট এক্সট্র্যাক্টঃ এই উপাদানটিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি তেল উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে যা কম্বিনেশন স্কিন বা সংমিশ্রন ত্বকের জন্য খুবই কার্যকর।
গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্টঃ গ্রিন টি তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য বেশ পরিচিত, যা ত্বককে প্রশমিত করতে এবং ত্বকের বিভিন্ন উদ্বেগের সমাধান করতে সহায়তা করে। কম্বিনেশন স্কিন বা সংমিশ্রন ত্বকের জন্য এটি আপনার প্রথম পছন্দ হতে পারে।আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ এবং সংবেদনশীলতা পরিবর্তিত হয়, তাই একজন ব্যক্তির জন্য যা কাজ করে তা অন্যের জন্য কাজ নাও করতে পারে। কম্বিনেশন ত্বকের যত্নের জন্য সঠিক পণ্য এবং সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কম্বিনেশিন ত্বকের জন্য সিরাম বাছাই করার সময় নতুন পণ্যগুলির প্যাচ টেস্ট করা উচিত যাতে তারা ত্বকে কোন প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারে। প্রয়োজনে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। ১০০% অথেনটিক এবং নিত্যনতুন স্কিন কেয়ার পণ্য কিনতে ক্লিক করুন এখানেhttps://mumolifestyle.com/product-category/skincare-items/?v=fbd25224d617 Facebook Page: https://www.facebook.com/MumoLifeStyle123